স্বদেশ ডেস্ক:
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সমাপ্ত অর্থবছরে রফতানি আয়েও রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার ঈদুল আজহার কারণে চলতি মাসে প্রবাসী আয়ে চাঙ্গাভাব ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও নিয়মিত ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরও সর্বত্রই যেন ডলারের হাহাকার। এতে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। খোলাবাজারে সর্বকালের রেকর্ড গড়ার একদিন পর ব্যাংকেও ডলারের দামে নতুন রেকর্ড হয়েছে। গতকাল ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। একদিন আগে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১২ টাকায় উঠে। মূলত সংকটকে পুঁজি করে ডলারের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে ডলারের বাজারের অস্থিরতা রোধে গতকাল গোয়েন্দা সংস্থা থেকে খোলাবাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আর তাতেই এ বাজারে একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম ৪ টাকা কমে ১০৮ টাকায় নেমেছে।
সূত্রগুলো বলছে, বিনিয়োগে সবার আস্থায় এখন মার্কিন ডলার। আর এ কারণে স্বল্পসময়ে অতিমুনাফার আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ বিনিয়োগকারীও ডলার কিনে ধরে রাখছেন। ফলে খোলাবাজারে সংকট আরও বেড়েছে। এতে দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তাই খোলাবাজার থেকে কারা নগদ ডলার কিনছে, কী উদ্দেশ্যে কিনছে, কেউ ডলার কিনে ধরে রাখছে কিনা তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
জানা গেছে, সাধারণত বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসংক্রান্ত খরচের জন্য মানুষ খোলাবাজার কিংবা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনে থাকে। ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও খোলাবাজারে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। এই শিথিলতার কারণে যে কেউ চাইলেই খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে পারেন। আর সেই সুযোগে রাতারাতি মুনাফা করার আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এখন ডলারে টাকা খাটাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিদ্যমান মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীদের অনেকেই ডলার মজুদ করছেন। আর এ কারণে খোলাবাজারে গত কয়েক দিন ধরে ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত দোহার মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ঈদুল আজহার পর থেকে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে, কিন্তু সরবরাহ নেই বললেই চলে। এ কারণে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। কেউ ডলার কিনে মজুদ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ ডলার কিনে মজুদ করছে কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। তবে প্রতিদিনই বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসংক্রান্ত খরচের জন্য মানুষ ডলার কিনতে আসছেন।
দেশে অনুমোদিত মানিচেঞ্জার সংখ্যা এখন ৬০২টি। এর মধ্যে ২৩৫টির বৈধতা আছে। বাকিগুলোর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল রয়েছে। তবে অনেক মানিচেঞ্জার এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে, যারা প্রতিষ্ঠানের বাইরে গ্রাহকদের কাছ থেকে ডলার কেনাবেচা করে। এ ধরনের লেনদেন অবৈধ।
গতকাল দিলকুশায় অবস্থিত কয়েকটি মানিচেঞ্জার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানি চেঞ্জারগুলোকে ক্রেতা খুব একটা নেই। বেশির ভাগ মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী অলস সময় কাটাচ্ছেন। মাঝেমধ্যেই তাদের কাছে ডলার কেনার অর্ডার আসছে।
দিলকুশার একটি মানিচেঞ্জারের কর্মী সাইফুল সেখ আমাদের সময়কে বলেন, ডলার কিনতে অনেকেই সশরীরে মানিচেঞ্জারে আসেন না। মোবাইল বা টেলিফোনেই অর্ডার করেন। সেই অর্ডার অনুযায়ী ডলার পৌঁছায় দেওয়া হয়। এটা গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক বেড়েছে।
পিজি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নিজেই ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। তার প্রয়োজন ১০ হাজার ডলার। কিন্তু নিজে কয়েকটি ব্যাংক ও মানিচেঞ্জারে গিয়ে ডলার কিনতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি খোঁজ পান একজন মৌসুমি ব্যবসায়ীর। সেই ব্যবসায়ীকে ফোন দিতেই তার কাছে পৌঁছে যায় ১০ হাজার ডলার। তবে তাকে প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হয় ১১২ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোলাবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গতকাল গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের ১০ টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে অভিযান চালায়। এ সময়ে তারা দৈনিক লেনদেনের নথি সংগ্রহ করে। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা সেটি জানা যায়নি।
বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে এনএসআইয়ের ১০ টিম কার্ব মাকেটে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে। এ সময়ে তারা মানিচেঞ্জারগুলোর নিয়মিত তাদের ডলারের কেনাবেচার তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করছে কিনা, পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কারোর সঙ্গে ডলার কেনাবেচনা করছে কিনা প্রভৃতি বিষয় খতিয়ে দেখেছে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের পর গতকাল খোলাবাজারে ডলারের দাম নেমে আসে ১০৮ টাকায়। তবে খোলাবাজারে কমলেও ব্যাংকগুলোতে ডলারের দামে নতুন রেকর্ড হয়েছে। গতকাল ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গতকাল বিদেশি খাতের আল ফালাহ ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ২০ পয়সায়। বেসরকারি গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৯ টাকা। হাবিব ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৮ টাকা। আইএফআইসি ও দ্য সিটি ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৭ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য বেশির ভাগ ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৫-১০৬ টাকায়।